
ঢাকা, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ — বাংলাদেশ হাইকোর্ট বুধবার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া হিন্দু নেতা ও সাবেক ইস্কন কর্মকর্তা চন্দন কুমার ধর, যিনি চিন্ময় কৃষ্ণ দাস নামে পরিচিত, তাকে জামিন প্রদান করেছে। এই মামলা দেশব্যাপী প্রতিবাদ এবং আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক মনোযোগ সৃষ্টি করেছে।
২০২৪ সালের ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত একটি সমাবেশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপরে গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের অভিযোগে ৩০ অক্টোবর চিন্ময় দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চট্টগ্রামের একটি নিম্ন আদালতে তার জামিন আবেদন খারিজ হওয়ার পর, তার আইনজীবীরা হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্ট বুধবার জামিন মঞ্জুর করে। দাসের আইনজীবী প্রবাল দেবনাথ জানিয়েছেন, আপিল বিভাগ যদি হাইকোর্টের আদেশের উপর স্থগিতাদেশ না দেয়, তাহলে শিগগিরই তার মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই এই ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্নে সোচ্চার। বর্তমানে তিনি ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’-এর মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক আলাদা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছেন।
২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি ইস্কনের চট্টগ্রাম বিভাগের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শৈশবে অসাধারণ বক্তৃতার জন্য তিনি ‘শিশু বক্তা’ নামেও পরিচিত ছিলেন। ২০২৪ সালে ইস্কন থেকে বহিষ্কৃত হন।
২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রেক্ষাপটে এই গ্রেপ্তার ও মামলার ঘটনা ঘটেছে। ভারত যখন হাসিনাকে আশ্রয় দেয়, তখন থেকে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কেও টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে এবং ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রত্যার্পণ চেয়েছে। এখনো ভারতের পক্ষ থেকে কোনও জবাব পাওয়া যায়নি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে জামিন দেওয়া অস্থির পরিস্থিতি কিছুটা প্রশমিত করতে পারে, তবে এটি বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে গভীর সমস্যা ও বিভাজনকে তুলে ধরেছে।